• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

মাঠে মাঠে অনিন্দ্য শোভা আর স্নিগ্ধ সুবাসের ঘ্রাণ

  • ''
  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০২৪

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:

সামনে কয়েকদিন পর পহেলা বৈশাখ প্রধান কয়েকটি দিবস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীরা সারা বছরই ব্যাস্ত সময় পার করেন। তাদের যেন কোন ফুরসত নেই।তার্ই প্রতিটি দিবস উপলক্ষ্যে ফুলের রাজ্যে লাগে অন্যরকম হাওয়া। বর্তমানে এলাকার ফুল চাষিরা নিজের বাগান পরিচর্চা ও বাজার নিয়ে নানা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। ঝিনাইদহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় কৃষকরা এখন বানিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলর চাষ করেন। অনেকে ফসলি চাষ কন্ধ করে ফুল চাষ করে ধাকেন।মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে অনিন্দ্য শোভা আর ফুলের স্নিগ্ধ সুবাস। চাষিরা বলছেন ফুল এখন শুধু জাতীয় দিবসেই নয় সারা বছরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর সামনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কত টাকার ফুল বিক্রির সম্ভ¦না রয়েছে তা এখন কেউ বলতে পারছে না।

বাংলাদেশ ফ্লোয়ার সোসাইটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও গান্না বাজার ফুল চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি জমির উদ্দীন জানান, জেলা সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। গ্রামের মাঠে শোভা পাচ্ছেন চায়না গোলাপ,থাইগোলাপ,জারবেরা,গ্লাডিওলাস,রজনীগন্ধা,মাম ফুল, বোতাম ফুল,গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকা ফুলের ক্ষেত।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দিবস কে সামনে রেখে ফুল চাষি ও ব্যবসায়িরা বাজার ধোরতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে অধিক টাকা লাভের আশায়। গান্না বাজারের ফুলচাসি নজরুল ইসলাম ও আদম আলী জানান, এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করতে তাদের সাকুল্যে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বছর শেষে তাদের লাভ হয় বিঘা প্রতি জমিতে ২০ লাখ টাকা। ওই এলাকার ফুল চাষি মারুফ ও হাসান জানান, এক বিঘা জমিতে জারবেরা ফুল চাষ করতে ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে বছর শেষে লাভ হয়, ২৫ লাখ টাকা।

কালীগঞ্জের বেলডাঙ্গা গ্রামের ফুল ব্যবসায়ী প্রদিপ সাহা জানান, ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বিক্রি বেশি হয়, বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুল চাষি ফজলুর রহমান খাঁন বলেন, ফুলের মান ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। আশা করছি, ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারবেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, তার দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ বাগান রয়েছে।

বাগানের গোলাপগুলো লংস্টিক এবং লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ও গোলাপি রঙের। এ রঙের ফুল ভালোবাসা দিবসে অনেক বেশি কদর থাকে। এ বছর আবহাওয়া কারণে উৎপাদন অনেক কম। গাছে এখন নতুন কুড়ি এসেছে। আর যেনো নষ্ট না হয় সেজন্য ভিটামিন প্রয়োগ করছেন। তিনি আশা করেন, এ বছর এক একটি গোলাপ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছেন।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগার আলী জানান,জেলায় রবি মৌসুমে ২১৬ হেক্টর ও খরিপ মৌসুমে ১৮৪ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়ে থাকে। চলতি বছরে এই চাষ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে এমন টা আশা করা যায়। এই ফুল সেক্টরে প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন বলেও তিনি মনে করেন। ঝিনাইদহ গান্না বাজার ফুল চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি জমির উদ্দীন জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি কিছুটা কম থাকলেও মূলত বেচাকেনা হয় উৎসবকে ঘিরে।

কালীগঞ্জে অনেক ফুল চাষি বাগান থেকে জারবেলা ফুল তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে।

ফুলের রাজধানী খ্যাত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে জারবেরা ফুলের চাষ হচ্ছে। কালীগঞ্জে নতুন অতিথি এখন জারবেরা ফুল। শুধু জারবেরাই নয় পাশাপাশি গ্লালোডিয়াস, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, ভুট্টা ফুল, লিলিয়াম ও স্ট্রবেরি ফল চাষে নজর কেড়েছে টিপু সুলতানের বাগান।এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানেও পাঠানো হচ্ছে এই ফুল। শুধু ফুল বিক্রিই নয় দুর-দূরান্ত থেকে অনেকে এই বাগান দেখতে আসেন। প্রায়ই বিকেলে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান ছবি তুলতে। পাশাপাশি ফুল কিনতে।

২০১৬ সালের জুন মাসে প্রায় তিন বিঘা জমিতে প্রথম জারবেরা ফুলের বীজ রোপণ করেন ফুলচাষি টিপু সুলতান। বীজ আনা হয় ভারত থেকে। আর ফুল ক্ষেতের উপর ছাউনি দিতে একই দেশ থেকে আমদানি করা হয় বিশেষ ধরনের পলিথিন। যা তৈরি হয় ইউরোপের দেশগুলোতে। রোপণের তিন মাস পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। একটি গাছ একাধারে দুই থেকে তিন বছর ফুল দেয়। কৃষিবিদ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জারবেরা ফুল চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী। বছরের যেকোনও সময় চাষ করা যায়। শীত মৌসুমে উৎপাদন বেশি হয়। এছাড়া দেশের বাজারে এই ফুলে দাম ও চাহিদা বেশি। তবে এই ফুল লাভজনক হলেও খরচ বেশি হওয়ায় চাষ করতে পারছেন না সাধারণ কৃষকরা। ক্ষেত মালিক ও ব্যবসায়িরা সামনে কয়েকদিন পর বাংলা নববর্ষ সে লক্ষে তারা বাজার ধোরতে ওত পেতে বসে আছে ও তাদের জমিতেফুলের সুন্দর্য বহারি করতে ব্যাপক ভাবে সময় দিচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads